স্কুল কলেজের শিক্ষায় দ্বীনি উদাসীনতা এবং আমাদের করনীয়-৪

স্কুল কলেজের শিক্ষায় দ্বীনি উদাসীনতা এবং আমাদের করনীয়-৪

আগের লেখাগুলোয় শিক্ষার বর্তমান পাঠ্যপুস্তকের বিপরীতে করণীয় এবং প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের জন্য দ্বীনি মোড়কে দুনিয়াবি শিক্ষা সিলেবাস ও পাঠ্যপুস্তকের উদ্যোগের কথা বলেছি। এগুলো অনেক বড় বড় কাজ, অনেক জ্ঞানীগুণী মানুষের দরকার। দরকার অনেক সময়। 

এখন চলুন আমরা যুবকেরা বিদ্যমান পরিস্থিতির ভিতর থেকে কিভাবে সামাজিক শিক্ষামূলক কার্যক্রম হাতে নিতে পারি সেদিকে আলোকপাত করা যাক। 

এখানে বিষয়টাই এমন যে একটি লম্বা ভূমিকার প্রয়োজন। 

প্রথম কথা হল, একজন মুসলিম যুবক হিসেবে উম্মাহর জন্য আমাদের অনেক কিছুই করার আছে এবং আমাদেরকে করতে হবে। তবে কিছু করার আগে আমাদেরকে উম্মাহর অবস্থা, উম্মাহর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, ইসলামের স্বরূপ, তার ইতিহাস, বিভিন্ন সময়ে চ্যালেঞ্জ ইত্যাদি অনেক কিছুই মাথায় আনতে হবে।

এ বিষয়টা এমন না যে দুম করে কিছু একটা করে ফেলা যাবে। কিন্তু তাতে নিজেরই বা কতখানি উপকার হবে, আর দীর্ঘমেয়াদে জাতিই বা কি পাবে সেটা ভাবার বিষয়। 

যেহেতু আমাদের মূল উদ্দেশ্য আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা, সেহেতু প্রথমেই নিজের অবস্থা কি সেটা মাথায় আনতে হবে। আমি কি নিয়মিত ফরজ সমূহ পালন করছি? আমি কি ইলম অর্জনের সাথে জড়িত আছি? আমি কি দ্বীনের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন? এই রকম বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে।

আমার নিজের মধ্যে যদি দ্বীনের বেসিক বিষয়গুলোও প্রবেশ না করে থাকে তাহলে আমি কিভাবে দ্বীনের জন্য কাজ করব? আমার সাথে যদি আলেম উলামাদের সম্পর্কই না থাকে আমি কিভাবে বুঝব কোন বিষয়টা ইসলামের জন্য উপকারী, আর কোনটা ক্ষতিকর? তাহলে আমি যেসব উদ্যোগ নিব, সেগুলো যে বাড়াবাড়ি, ছাড়াছাড়ি থেকে মুক্ত হবে না তার কি গ্যারান্টি থাকবে? 

প্রতিটা নতুন উদ্যোগ অনেক চ্যালঞ্জের মুখোমুখি হয়। এগুলোর জন্য দরকার নিজের স্থিরতা, কোন উদ্যোগটা সমাজে কি প্রভাব ফেলবে সেটা বুঝা, কোনটার জন্য কতটা ধৈর্যধারণ করতে হবে সেগুলো সামনে আনতে হবে। এমন কিছু করলাম, সমাজে নতুন করে কনফিউশান তৈরি হল, ফেতনা তৈরি হল। তাহলে তো হবে না। 

উদ্যোগগুলো হতে হবে সর্বপ্রথম আমার নিজের জন্য উপকারী। এক্ষেত্রে যতটা পারা যায় জায়েজের সীমায় থেকে ইনক্লুসিভ করা, বিদ্বেষ পরিহার করা। 

এখন তাহলে প্রশ্ন উঠবে, তাহলে কি নিজেরা আগে তৈরী হয়ে তারপর কাজ করব? উত্তর হল, সেটা করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হত। কিন্ত বর্তমানে আমাদের চারপাশের যে অবস্থা, তার দিকে তাকালে সহজেই বুঝা যায় যে কাজগুলো আমাদের দ্বীনি তরবিয়তের পাশাপাশি প্যারালাল চালাতে হবে। 

নিজের পড়াশুনা বা কাজের কি হবে? সেটা অবশ্যই পুরোদমে চালাতে হবে। আমাদের এটা মাথায় রাখতে হবে, আমরা যে কাজই করি না কেন আমাদের নিজ নিজ দায়িত্বের ক্ষেত্রে কোন অবহেলা নয়। 

অনেকে প্রশ্ন করতে পারে, প্রচলিত অনেক সামাজিক সংগঠন আছে, শিক্ষামূলক সংগঠন আছে। ফাউন্ডেশন আছে। ট্রাস্ট আছে। তাহলে আবার নতুন ফর্মুলার কি প্রয়োজন? 

প্রচলিত প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি হবার সময় তাদের নিজ নিজ আদর্শের ভিত্তিতে তৈরি হয়। তাদের একটা গঠনতন্ত্র থাকে। তাদের স্পেসিফিক কিছু উদ্দেশ্য থাকে। সেখানে উল্লেখযোগ্য একটা সময়ের দরকার হয়। 

আমাদের কাজটি সেই অর্থে সংগঠিত কিছু না। অনানুষ্ঠানিক একটা বিষয়। এটা কেবলমাত্র নিজেদের ও নিজেদের ছোট ভাইবোনদের জন্য নিবেদিত সামান্য কিছু কার্যক্রমের নাম, এত ব্যাপক কিছু না।

এখানে আরেকটা বিষয় সামনে আনতে চাই। বর্তমানে ইসলামের সাথে অন্য দ্বীন যেমন- সেক্যুলারিজম, লিবারেলিজম ইত্যাদি পশ্চিমা বিভিন্ন দর্শনের সংঘর্ষটা অনেক ক্ষেত্রেই বুদ্ধিবৃত্তিক। এখানে আমরা অনেক পিছিয়ে। আলহামদুলিল্লাহ আলেম উলামার পাশাপাশি আমাদেরই কিছু বড় ভাই এখন এসব বিষয়ে কাজ করছেন, বই লিখছেন, প্রবন্ধ লিখছেন, ভিডিও বানাচ্ছেন, পডকাস্ট বানাচ্ছেন, বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে গিয়ে কথা বলছেন। এদের অনেকে আবার স্পেসিফিক কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করছেন। যেমন- লস্ট মডেস্টি টিমের কথা না বললেই না। অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার বিরুদ্ধে উনারা যুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছেন। আমরা তাদেরই অনুসারী, তাদের কাজ দেখেই অনুপ্রাণিত। 

আমাদের কাজ বিচ্ছিন্ন কিছু হবে না। আলেমদের পরামর্শে, উক্ত ভাইদের তৈরি করা বিভিন্ন রিসোর্স এর ভিত্তিতেই হবে। কারণ যুদ্ধটা উনাদের একার না। অনেক ভাইয়েরাই স্রোতের বিপরীতে গিয়ে লড়ছেন, আমরা জানি না হয়ত। 

অনেক এলোমেলো কথা হলো। এর সারকথা জানিয়ে দিই। 

আমাদের কাজ হবে নিজেদের দ্বীনি তরবিয়তের সাথে। আলেমদের পরামর্শক্রমে। স্কুল ও কলেজগামী তরুণদের জন্য। এলাকার যুবকদের জন্য। সামাজিক বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে। শিক্ষামূলক কিছু কার্যক্রম নিয়ে। কাজ এত বেশী হবে না যাতে নিজেদের মূল দায়িত্ব পালনে বাধার সৃষ্টি না হয়। অর্থাৎ নিজেদের সামর্থের মধ্য থেকে নিজেদের জন্য সামান্য কিছু কাজ। 

এর আরেকটা মূল উদ্দেশ্য নিজেদের মধ্যে এলাকাভিত্তিক/প্রতিষ্ঠানভিত্তিক/সার্কেলভিত্তিক দ্বীনি নেটওয়ার্ক মেইনটেইন করা, নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো, আলিমদের সাথে যোগাযোগ বাড়ানো, বিভিন্ন দ্বীনি প্রজেক্টে সাপোর্ট দেয়া, বিভিন্ন সামাজিক শিক্ষামূলক কাজে সাপোর্ট দেয়া। 

মোটকথা আলিম ও সাধারণের মধ্যে একটা ব্রীজ হিসেবে কাজ করা। এতে নিজের যেমন উপকার হবে, তেমনই সমাজে একটু হলেও ইসলামী চেতনা বাড়বে। 

উদ্যোগ সম্পর্কে কিছু আইডিয়া ইনশাআল্লাহ সামনে দেয়ার চেষ্টা করব।

পেশায় তড়িৎ প্রকৌশলী। মাঝে মাঝে কিছু লিখতে ইচ্ছা হয়। কিছু লিখি। তারপর আবার মুছে ফেলি। লেখা আর মুছে ফেলার মাঝে কিছু থেকে যায়। সেগুলোর জন্যই এখানে আসা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top