প্রথমেই বলে রাখি, আমি ক্ষুদ্র জ্ঞানের মানুষ। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়ে আল্লাহ তায়ালা একটা পেশার সাথে সম্পৃক্ত রেখেছেন। পাশাপাশি দ্বীনি ইলম অর্জনের চেষ্টা করছি। তালিবে ইলম বলা যায়। আমলে যদিও শুন্যপ্রায়।
ইলমে আমলে কমতি থাকলেও স্কুল কলেজ পড়ুয়া এক বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীর প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে কিছু লেখা। অনেক দিন থেকেই কিছু চিন্তাভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে। ছোটখাট একটা ড্রাফট করার চেষ্টা করছি। ড্রাফট তৈরি হয়ে প্রয়োজনীয় শরয়ী সম্পাদনা হলে ইনশাআল্লাহ সামনে পেশ করব। সময় লাগবে যদিও। তারপর আস্তে আস্তে ওই পরিকল্পনা ও কর্মপদ্ধতি অনুযায়ী সামনে আগানো যাবে। ইনশাআল্লাহ!
বর্তমানের স্কুলের সাধারণ শিক্ষারও যাচ্ছেতাই অবস্থা। ইসলামী শিক্ষা বলতেও তেমন কিছু নাই। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যায় আর আসে। এত কোচিং প্রাইভেটে যে কি পড়ে আল্লাহ মালুম। যাই হোক আজ অন্য বিষয়ে প্রাথমিক একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব।
ভূমিকা লম্বা হয়ে যাচ্ছে। তারপরও বলি যে কোন নতুন জিনিসে কষ্ট মুজাহাদা বেশী লাগে। রিস্ক থাকে, ত্যাগ করার ইচ্ছা লাগে। এটা আলহামদুলিল্লাহ আমাদের আছে। আমাদের ছোটভাইবোনদের দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য এতটুকু তো আমরা করতেই পারব।
আমরা কারা? আমরা তারাই যারা এইচএসসি পাশ করে হয় অনার্সে ভর্তি হয়েছি , তা হতে পারে কোন কলেজ, হতে পারে কোন বিশ্ববিদ্যালয়। হয়ত আমরা অনেকেই চাকরি খুঁজছি। অনেকে চাকরি ব্যাবসা শিক্ষকতা বা অন্য কোন পেশার সাথে জড়িত আছি। আমরা বেশীরভাগই গায়রে আলেম। কিন্তু আমরা আলহামদুলিল্লাহ বেসিক দ্বীনি বিষয়াদি মেনে চলার চেষ্টা করি, ইসলামি সমাজ চাই। আমরা চাই আমাদের ছোটভাইবোনেরা একটা সুস্থ শিক্ষা পাক, দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করুক।
আমাদের উদ্দেশ্য কারা? যারা স্কুল কলেজে পড়ে। অনেকে হয়ত আমরা তাদেরকে টিকটক বা গেমার প্রজন্ম হিসেবে চিনি। কিন্তু এতে আমার আপত্তি আছে। আমি বিশ্বাস করি ওদের মধ্যে যথেষ্ট ভালো মানসিকতা রয়েছে। আমাদের প্রয়োজনীয় গাইডেন্স পেলে ওরা ইনশাআল্লাহ আমাদেরকে ছাড়িতে যাবে অনেকগুণ।
মূল কথায় আসি। আমরা কি করতে পারি? আমাদের করার আছে অনেক কিছুই।
প্রথমে আমাদেরকে কয়েকভাগে ভাগ করি। আমাদের কেউ কেউ আছে যাদের সময় আছে, উদ্যম আছে, তবে অভিজ্ঞটা, জ্ঞান, অর্থ এদিক দিয়ে ঘাটতি আছে। আবার অনেকের অর্থ আছে সময় নাই। অনেকের লেখার যোগ্যতা আছে। কারও আছে কনটেন্ট তৈরি করার দক্ষতা। আবার কেউ ফিল্ড লেভেলে কাজ করতে পটু। এদের প্রত্যেকের কাজের ক্ষেত্রে রয়েছে।
আমাদের অডিয়েন্সকেও কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর দিকের শিক্ষার্থী। এছাড়া অভিভাবক, শিক্ষক এবং এলাকার যুবক ভাইয়েরাও আমাদের অডিয়েন্স।
আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভাই কাজ করছেন। এদের অনেকের কাজ দেখেই আমরা অনুপ্রাণিত। তাদের লেখা পড়ে আমাদের এই অগ্রসরতা। নিচের কয়েকটি ধারায় কাজ গুলো সংক্ষেপে উল্লেখ করছি।
১। শিক্ষাক্রমে বর্তমানে যত বই আছে সবগুলোর পর্যালোচনা করে শ্রেণী ও বিষয়ভিত্তিক টিকা সহ পুস্তক প্রণয়ন। অন্তত এক শ্রেণির সবগুলো বই মিলে একটা পুস্তক তো হতেই পারে। দুই ভার্সন। একটা সংক্ষেপ। একটা রেফারেন্স সহ। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ভার্সন করতে পারলে আরও ভালো হয়। প্রতি বছর এটা সংশোধন হতে থাকবে। এটা এক ধরণের এন্টিবায়োটিকের মত। রিএকটিভ এপ্রোচ। এর জন্য ন্যাশনাল লেভেলের একটা টিম থাকবে। প্রথমে সাধারণদের বিষয়ভিত্তিক টিম থাকবে যারা তাদের বিষয়ে বই পর্যালোচনা ও লিখনের কাজটি করবে। আর আলেমদের কয়েকটি টিম থাকবে এগুলো সম্পাদনার জন্য।
২। ক্লাস ফাইভ, এসএসসি ও এইচ এস সই এর জন্য ইসলামি ভাবধারা সম্বলিত অন্তত ইসলামবিদ্বেষ মুক্ত স্ট্রং কিছু গণিত, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ের পুস্তক প্রণয়ন যেগুলো শিক্ষাক্রমের প্যারাল্যালে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পারবে, পোলাপানের বেসিক শক্তিশালী করবে, এবং ভর্তি পরীক্ষায় সহযোগিতা করবে। এর জন্যেও পূর্বে লিখিত কার্যক্রম প্রযোজ্য।
৩। স্কুল কলেজের বিভিন্ন লেভেলের উপযোগী ফরজে আইনের এক্কেবারে বেসিক সংবলিত পুস্তিকা প্রণয়ন, যেগুলো হবে স্ট্যান্ডার্ড মানের, সুলভ মূল্যের, সহজে বোধগম্য এবং সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের। এ কাজে আলেমদের টিম মুখয় ভূমিকা পালন করবে, সাধারণেরা সাহায্য করবে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ারের মাধ্যমে। এগুলোর কয়েকটি ভার্সন থাকিবে। এক মাস মেয়াদী কোর্সের জন্য, ছয়মাস মেয়াদী, এক বছর মেয়াদী ইত্যাদি। এছাড়া সীরাত, সাহাবা জীবন, গল্প বা উল্লেখযোগ্য ও প্রয়োজনীয় বিষয়ে ছোট ছোট বিভিন্ন পুস্তক রচনা করবে।
৪। সময়ের বিভিন্ন সমস্যা, ফেতনা ইত্যাদির বিষয়ে তরুণদের সচেতন করার জন্য পাওয়ারপয়েন্ট স্লাইড, লিফলেট, পুস্তিকা ভিডিও , অডিও ইত্যাদির ন্যাশনাল আর্কাইভ থাকবে। এগুলো তৈরি ও আপডেটের জন্য কয়েকটা টিম কাজ করতে থাকবে।
এতক্ষণ ডেস্ক জবের কথা বলা হল। এবার ফিল্ড লেভেলে আসা যাক।
৫। এলাকাভিত্তিক অনার্সপড়ুয়া বা তার উপরের দ্বীন সচেতন তরুণদের সমন্বয়ে কিছু ক্লাব, ফোরাম বা এইজাতীয় টিম থাকবে। সংখ্যায় খুব বেশী হতে হবে এমন না। এদের উদ্দেশ্য হবে এক, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা। এখানে মনে রাখতে হবে এটা কিন্তু সামাজিক শিক্ষাভিত্তিক আন্দোলন। একে নিজের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। আকীদা, মাজহাব ইত্যাদি বিষয়ে যথাসম্ভব প্রান্তিকতা পরিহার করতে হবে। মানে নিজেদের আসল উদ্দেশ্যের দিকে ফোকাসড থাকতে হবে।
৬। (৫) এ বর্ণিত টিমের একটি কাজ হবে তার এলাকার সব ধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে, সেটা মক্তব থেকে শুরু করে স্কুল কলেজ , যুক্ত রাখা, খোঁজখবর নেয়া। যেভাবে সুযোগ হয়।
৭। (৫) এ বর্ণিত টিম তার এলাকায় মাসিক, ত্রৈমাসিক কিংবা ছয়মাস পর পর হলেও (৪) এর কন্টেন্ট ব্যবহার করে এলাকায় যুব, তরুণদের সচেতন করার জন্য সেমিনার বা এ জাতীয় কিছু আয়োজন করবে। এখানে তারা নিজেরা বক্তব্য দিতে পারে, অথবা জেলা বা বিভাগভিত্তিক এ বিষয়ে দক্ষ কোন টিমের সাহায্য নিতে পারে। এছাড়া এলাকার সচেতন জ্ঞানী সিনিয়রদেরও বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ করা যেতে পারে। এই সেমিনারের যে খুব বড় কলেবরের হতে হবে তা নয়, বরং একটা সভারুমে অনুমতি নিয়ে আয়োজন করে ফেলা যায়।
৮। (৭) এর বর্ণিত পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক আয়োজন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন হতে পারে। এছাড়া একই ধরণের আয়োজন অভিভাবক, শিক্ষকক এদেরকে উদ্দ্যেশ্য করেও করা যায়।
৯। এলাকাভিত্তিক বা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক ছোট ছোট প্রতিযোগিতার আয়োজন করে যেতে পারে। সামর্থ থাকলে এলাকাভিত্তিক, না হলে প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক আয়োজন। এক্ষেত্রে (৩) নং এ বর্ণিত পুস্তক সমূহের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
১০। এলাকার মক্তব শিক্ষাকে শক্তিশালী করার জন্য সচেতনতা কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে স্কুলের পূর্বে, স্কুলের পরে অল্প সময়ের জন্য মক্তব এর প্রচলন করার জন্য শিক্ষক, অভিভাবক, পরিচালনা কমিটি , আলেম উলামাদেরকে সচেতন করার জন্য (৫) নং এ বর্ণিত টিম কাজ করবে।
১১। পরিচালনা কমিটি ও আলেমদের সহযোগিতায় মসজিদ্ভিত্তিক বিভিন্ন প্রোগ্রাম হাতে নিবে, এই প্রোগ্রামে ছাত্র, যুবকদের দাওয়াত দিবে। অল্প সময়ে কার্যকরী নসিহত মূলক হতে পারে। এছাড়া মসজিদভিত্তিক বা অন্যান্য বয়স্ক দ্বীন শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তোলার চেষ্টা করবে। মানসম্মত ইসলামিক স্কুল বানানোর জন্যও চেষ্টা করবে।
১১। (৫) নং টিম নিজেদের দ্বীনি তরবিয়তের ব্যবস্থা করবে। তারা হাক্কানি আলেমদের সাথে নিজেদের যোগাযোগ রাখবে, তাদের লেকচার শুনবে, সব কাজে তাদের পরামর্শ নিয়ে চলবে। এছাড়া সম্ভব হলে নিজেদের জন্য যথাসম্ভব ইলম অর্জনের ব্যবস্থা করবে।
১২। (৫) নং টিম তাদের সামর্থ অনুযায়ী কাজ করবে। এমন যেন না হয় , দুইমাস মহা উৎসাহে কাজ করলাম, এরপর হারিয়ে গেলাম। তার থেকে বরং বছরে দুইটা প্রোগ্রাম হাতে নিক তাও ভালো। এমন না যে তাদের এক স্থানেই থাকতে হবে। নিজেদের পড়াশোনা, কাজকর্মের দিকেও যথাসম্ভব খেয়াল রাখবে। মাঝে মাঝে নিজেরা এক স্থানে বসে আলোচনা করবে। নিজেদের মধ্যে নেটওয়ার্কিং বজায় রাখবে।
ফিল্ড লেভেলের কাজ তো কিছু বলা হলো। অর্থ কে দিবে?
১৩। আর্থিক সহযোগিতা করবে যাদের সামর্থ আছে কিন্তু সময় নাই। প্রতি এলাকার টিম তাদের এলাকাভিত্তিক বা নিজেদের বলয়ে পরিচিত একই উদ্দেশ্যে অর্থ ব্যয় করতে পারবে এমন আগ্রহপুর্ণ সিনিয়রদের খুঁজে বের করবে, তাদেরকে পরিকল্পনা জানাবে এবং পৃষ্ঠপোষকতায় রাজি করাবে। এক্ষেত্রে বলে রাখি, আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী টিম গুলো কার্যক্রম হাতে নিবে। এমন না যে সবাইকে সব জায়গায় অর্থ দিতে হবে। উপরে বর্ণিত যে কোন টিমের সাথে নিজের অর্থ দিয়ে সাপোর্ট দেয়া যায়।
বর্ণিত টিম গুলোকে এক নেটওয়ার্কে কাজ করতে হবে এমনটা জরুরি না। ন্যাশনাল পর্যায়ে কও অর্ডিনেট করতে পারলে ভালো। স্বাধীনভাবে কাজ করতেও পারে। তবে অবশ্যই খেয়াল করতে হবে উপকার করতে গিয়ে যেন ক্ষতি না হয়। খুব সতর্কতার সাথে কাজ করতে হবে মান সম্মতভাবে।
অনেক কিছুই বলা হল। এগুলো হল সংক্ষেপে বলা কথা। কাজ করতে গেলে আস্তে আস্তে আরও বিস্তৃত হবে, সমস্যা আসবে, সমাধান হবে।
এখানে স্মরণ করিয়ে দিই, এ এক জায়ান্টের সাথে যুদ্ধ। একদিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা ও সমাজব্যবস্থা, আর তাও এক দিনে প্রতিষ্ঠিত হয় নি। এর কাউন্টারে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইসলামের প্রতিষ্ঠার জন্য এ এক ক্ষুদ্র পদক্ষেপ। এর জন্য আমাদের নিজেদের ধৈর্য থাকতে হবে, ত্যাগ করার, ট্যাগ খাওয়ার, কথা শোনার, রিস্ক নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।
এমন না যে আমাকে সবগুলো কাজের সাথে জড়িত থাকতে হবে। আমি যে পয়েন্টে পারি ওই পয়েন্টেই কাজ করব। আবার সব একসাথে হতে হবে এমনও না। এক দিন, দুইদিন, এক বছর, দশ বছর কাজ করতে হবে।
আরেকটি বিষয় হল দ্বীন ছড়িয়ে দেবার দায়িত্ব একমাত্র আলিমদের নয়। এই কার্যক্রম তাদেরকে বাদ দিয়ে নয় বরং তাদের থেকে পরামর্শ নিয়ে আগাতে হবে। তারা যেহেতু প্রচলিত ব্যবস্থায় দ্বীন শিক্ষা দিতে ওইভাবে ঢুকতে পারছেন না, বা ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না সেজন্য আমরা তাদের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করব, তাদের সাপোর্টে থাকব।
যা বললাম এগুলো রাফ আইডিয়া মাত্র। এর সাথে আরও দশ মাথার প্লান এক করতে হবে। ইনশাআল্লাহ যতদূর সম্ভব নিজের সামর্থ অনুযায়ী শীঘ্রই একটা ডিটেইলস প্ল্যান হাজির করার চেষ্টা করব।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দ্বীনের সাথে জুড়ে থাকার তৌফিক দান করুন। আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র তৌফিকদাতা।