আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ?

আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ?

ধন-সম্পদ, প্রাচুর্য, সুখ শান্তি! আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ?

অনেক সময় আমরা কনফিউজড হয়ে যাই। যখন চোখের সামনে দেখি, এক সৎ ব্যক্তি, যে ন্যায়নিষ্ঠার সাথে জীবনযাপন করে, অভাবে-অনটনে জর্জরিত। অথবা কঠিন রোগে তার প্রিয়জন মারা গেল, আমরা দেখলাম। হঠাত করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ধ্বস নামল। অথবা দীর্ঘকাল রোগে ভুগে সে নিজেই পটল তুলল। আমরা আফসোস করলাম। বললাম, আল্লাহর দুনিয়ার কি বিচার!

আবার আরেক ব্যক্তি, যে কারো তোয়াক্কা করে না, ন্যায় অন্যায় মানে না। জন্মগতভাবে বিত্ত বৈভবের মধ্যে জন্ম নিয়েছে। এরপরও টাকা পয়সার প্রতি আগ্রহ কমে নি। বিলাসবহুল জীবনযাপন করে, দুহাতে টাকা কামায়, জীবনকে উপভোগ করে। তার প্রাচুর্য বাড়তেই থাকে। রোগেও ভুগে না তেমন, দেখে মনে হয় সুখ! আমরা হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি। কনফিউজড হয়ে বলি, আল্লাহর দুনিয়ার কি বিচার!

ধনী কুফরি রাষ্ট্রে অভাব নেই, শৃঙ্খলা ভালো, অনাবিল শান্তি। গরীব মুসলিম দেশে, অভাব-অনটন লেগেই আছে। আমরা পঙ্গপালের মত ছুটতে থাকি। বিত্ত বৈভবের পিছনে, একটু ভালো থাকার জন্য, কিংবা অনাবিল শান্তির খোঁজে।

মাঝে মাঝেই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, দুনিয়া এমন কেন?

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুব একটা কষ্ট হবার কথা না। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বারবার এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। দুনিয়ার জীবনের লক্ষ্য কি, উদ্দেশ্য কি?

দুনিয়া তো পরীক্ষার জায়গা, উপভোগের জায়গা নয়। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে অল্প কয়েকদিনের হায়াত দিয়েছেন, দিয়েছেন নানা অনুগ্রহ। তিনি যাকে ইচ্ছা তার নিয়ামত দান করে, যাকে ইচ্ছা পরীক্ষা নেন। সেই পরীক্ষা বিভিন্ন জনের জন্য বিভিন্ন রকমের।

কাউকে বিত্তবৈভবের প্রাচুর্যতা পেতে দেখেছেন, যেখানে হাত দেয় সেখানেই সোনা ফলে? মন্তব্য করবার আগে ভালো করে খেয়াল করুন, সে কি ইমানদার নাকি কাফির? সে কি আল্লাহর দেয়া নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে? যদি উত্তর না হয় তবে নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করুন, এটা তার জন্য আযাব। আল্লাহ তায়ালা ঢিল দিচ্ছেন, যখন তাকে এসবের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হবে তখন সে আটকে যাবে, একটি প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারবে না।

‘আর যারা কুফরী করেছে তারা যেন মনে না করে যে, আমি তাদের জন্য যে অবকাশ দেই, তা তাদের নিজদের জন্য উত্তম। আমি তো তাদেরকে অবকাশ দেই যাতে তারা পাপ বৃদ্ধি করে। আর তাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক আযাব।’ – সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ১৭৮

‘প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদের মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে যতক্ষণ না তোমরা কবরে উপস্থিত হও।’- সূরা তাকাছুর, আয়াত :১-২

আর যদি কোন ব্যক্তি তার ধনসম্পদের শুকরিয়া আদায় করে, তার উপর গরীবের যে হক, মানুষের যে হক, তা আদায় করে তবে সে তো আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করল, সে তার পরীক্ষায় পাশ, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট।

“যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এবং (আল্লাহর নিকট তাদের দানের পুরস্কার পাবেন এই) দৃঢ় আশাসহ আল্লাহ্‌র রাস্তায় দান করেন তাদের উদাহরণ ঐ বাগানের মতে যা উচ্চস্থানে, অতপর সেখানে মুষলধারে বৃষ্টি হয় ফলে এর ফলমূল দ্বিগুণ উৎপাদিত হয়, যদি সেখানে মুষলধারে বৃষ্টিপাত নাও হয় তবে অল্প বৃষ্টিই যথেষ্ট হয়।” ( সূরা বাকারাঃ আয়াত-২৬৫)

অপরদিকে রোগশোক, দারিদ্র্য, অভাব অনটন এসবও পরীক্ষা। শুধু পরীক্ষা নয়, কঠিন পরীক্ষা। পকেটে টাকা না থাকলে দিন দুনিয়ার কোনকিছু ভালো লাগে না, সংসার চালানোর জন্য এর কাছে ওর কাছে হাত পাততে হয়, অনেকক্ষেত্রে ঈমান হারিয়ে যাবার উপক্রম হয়। অনেক সময় বিভিন্ন কুফরি কথা মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে।

অথচ এই সময়ে যে ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর উপর ভরসা করে মিতব্যয়ীতার সাথে জীবনযাপন করবে সেও তার পরীক্ষায় পাশ করে যাবে। আর যদি ধৈর্য ধারণ না করে, উল্টাপাল্টা কাজ করে, আল্লাহর ন্যায়বিচার নিয়ে প্রশ্ন তোলে তবে তো সে ক্ষতির মধ্যে পড়ে গেল।

‘আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। ‘- সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৫৫

কাজেই আল্লাহ তায়ালা আমাদের যে অবস্থায় রাখুন না কেন আমাদের চেষ্টা করা উচিত যথাসম্ভব ধৈর্যধারণ করার, প্রাচুর্যতা পেলে তার শুকরিয়া আদায় করার পর যথাসম্ভব হক আদায় করা, আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা। তবে আল্লাহ তায়ালা সবসময় ভালো জিনিসটা চাইতে বলেছেন, তাইতো সকাল সন্ধ্যায় পড়তে বলেছেন,

‘হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই অলসতা ও খারাপ বার্ধক্য থেকে’

‘হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই কুফরি ও দারিদ্র্য থেকে’

আমরা প্রতিদিন এই দোয়াগুলো বেশী বেশী পাঠ করব। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে অলসতা, খারাপ বার্ধক্য, কুফরি ও দারিদ্রতা থেকে দূরে রাখুন এবং আমাদের জীবন ও জীবিকায় প্রশস্ততা দিন। আমিন।

পেশায় তড়িৎ প্রকৌশলী। মাঝে মাঝে কিছু লিখতে ইচ্ছা হয়। কিছু লিখি। তারপর আবার মুছে ফেলি। লেখা আর মুছে ফেলার মাঝে কিছু থেকে যায়। সেগুলোর জন্যই এখানে আসা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top