বর্তমান জামানায় প্রযুক্তিতে বুঁদ হয়ে থাকার কারণে আমরা সবকিছুকে ফর গ্রান্টেড ধরে নেই। তাই স্মার্টফোনের টাচস্ক্রিণ একটু ম্যালফাংশন করলে কিংবা নেটওয়ার্ক ডিস্টার্ব করলে অথবা হালকা ঝড়ে বিদ্যুৎ চলে গেলে দুই চারটা গালি দিতে অনেকে ভুলে না। অবশ্য এসব কিছু মানুষ পয়সা দিয়ে ভোগ করে, তাই প্রযুক্তিগত সার্ভিসের কোয়ালিটি অবশ্যই মানসম্মত হতে হবে। সেসব কথা থাক। আমি শুধু প্রযুক্তির প্রতি একটু জনগণের একটুখানি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই এসব সিস্টেম টিকিয়ে রাখতে অনেক মানুষের হাড়ভাঙ্গা খাটুনি থাকে, তাই এসবের ব্যবহারটা যেন যথাযথ হয়, অপব্যবহার বা ক্ষতিকর ব্যবহার করে এসবের উদ্দ্যেশে ঘি ঢেলে না দেয়।
বিদ্যুতের কথাই ধরা যাক। গরম লাগতেছে, সুইচটা চাপ দিয়ে দিলেন। পানি নাই, মোটরটা ছেড়ে দিলেন। মোবাইলে চার্জ নাই। চার্জে দিলেন। একটু পর ঝড় উঠল। নিঃশব্দে বিদ্যুৎ চলে গেল। মেজাজটাও বিগড়ে গেল।
বাসাবাড়িতে হোক কিংবা কারখানায় হোক বেশীরভাগ সময় বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় দূরের কোন এক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যা থাকে জেনারেশন কোম্পানির অধীনে। সেখান থেকে উচ্চ ভোল্টেজের বিদ্যুৎ বহন করে দূরে পোঁছানোর জন্য যে উঁচু টাওয়ার গুলো থাকে সেগুলো সহ বড় সাবস্টেশনগুলো থাকে ট্রান্সমিশন কোম্পানির আওতায়। আর ওদের থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে সেটাকে ভোল্টেজ ডাউন দিয়ে আমাদের বাসাবাড়িতে পৌঁছানোর কাজ করে ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কি থাকে? নিজ বিল্ডিং এ বা এলাকার ছোট খাট জেনারেটর তো অনেকেই দেখেছি। এর অর্ধেক হইল শ্যালোমেশিনের ইঞ্জিন, আর বাকি অর্ধেকে অনেকটা মটরের মত প্যাঁচানো কয়েল থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। ইঞ্জিনের কাজ হল জেনারেটরের ভিতরের শ্যাফট টাকে ঘুরানো। ছোটখাট এলাকায় বা বিল্ডিং এর চাহিদা একেবারে কম (পাঁচ দশ কিলোওয়াট) তাই ছোট জেনারেটর ব্যবহার করা হয়। এখানে মেইন কাজ হল তেল ঢাল, আর নষ্ট হইলে ছোট খাট পার্টস কিনে বদলাও। কপাল খারাপ হলে রাইস মিলের মটরের মত কয়েল পুড়ে যেতে পারে, তখন কয়েল বাধাই করে আন।
বড় জেনারেটরের ক্ষেত্রে ভেতরের শ্যাফট (রোটর) কে ঘুরানো সহজ কথা না। এটাকে ঘুরানোর জন্য আলাদা এরেঞ্জমেন্ট দরকার। ইঞ্জিনচালিত না হলে ফ্যানের মত পাখাওয়ালা যে এরেঞ্জমেন্ট থাকে তাকে বলা হয় টারবাইন। এক্ষেত্রে জেনারেটরের কয়েল আর রোটর এক অংশ, এর সাথে জয়েন দেয়া যায় এমন আলাদা অংশ হল টারবাইন। টারবাইনের একটা অংশ পাখা নিয়ে ঘোরে, আরেকটা অংশ কেসিং যেটা স্থির থাকে।
এখন এই জিনিসকে ঘুরাইতে গেলে তো কিছু একটা লাগবে। একটা পদ্ধতি হল ইঞ্জিনের মত তেল দিয়ে চালানো। আরেক পদ্ধতি হলে পানির বাষ্প দিয়ে চালানো। এখন এই বাষ্প যেন তেন বাষ্প নয়, এর তাপমাত্রা যেমন ঠিক রাখা লাগবে, তেমনি প্রেশারও ঠিক রাখা লাগবে (প্রেশারের ব্যাপারটা হল ট্রাকের চাকায় হাওয়া দেওয়ার জন্য যেরকম কম্প্রেসার দিয়ে বাতাসকে চাপ দিয়ে রাখা হয় ওই রকম কিছুটা)। আবার এই বাষ্প তৈরি করতে পানি ফুটানো লাগবে। সেজন্য আবার জ্বালানি লাগবে।
বাষ্প ফুটানোর জ্বালানি অনেক রকমের হতে পারে। এই জ্বালানি হতে পারে তেল, কয়লা, গ্যাস কিংবা পারমাণবিক শক্তি। পারমাণবিকের ক্ষেত্রে ইউরেনিয়াম নামক বস্তুর রডকে বিশেষ এক ধরণের বিক্রিয়া করিয়ে তাপ শক্তি বের করা হয়। এই বিক্রিয়া খুব বিপদজনক, এরে কন্ট্রোল না করতে পারলে বিশালাকারের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। পারমাণবিক বোমার কথা তো সবাই জানি। তাই এরে ওই পর্যন্ত যেতে না দিয়ে কন্ট্রোল করতে গিয়ে আরও বিভিন্ন রকমের সিস্টেম বানানো লাগে। ফলে খাজনার চেয়ে বাজনা বেশী হয়ে যায়, তবে এই বাজনা অতীব প্রয়োজনীয়।
জ্বালানি যদি গ্যাস হয় তবে তাকে পুরানোর সময় যে তাপ উৎপন্ন হয় তা দিয়ে এক ধরণের টারবাইনকে ঘুরানো যায় একে বলে গ্যাস টারবাইন। এই টারবাইনের আরেক মাথায় জেনারেটর লাগায়ে দিলেই বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। পোড়া গ্যাসের তাপমাত্রা অনেক বেশী থাকে। ফলে এই গ্যাস দিয়ে পানিকে বাষ্প করে সেই বাষ্প দিয়ে স্টিম টারবাইন ঘুরানো যেতে পারে। সেক্ষেত্রে এটা অনেকটা বোনাসের মত। এই পুরো সিস্টেমকে তখন কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বলা হয়।( আমার এ আলোচনা একেবারে প্রাথমিক ধারণা দেয়ার জন্য, অভিজ্ঞরা এড়িয়ে গেলে ভালো হয়। সাথে ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখলে কৃতজ্ঞ থাকব )