সেই হাঁটা এই হাঁটা

সেই হাঁটা এই হাঁটা

 তপ্ত বালু। তিনি হাঁটছেন। আশেপাশের মানুষ বংশের নামে অন্ধ। বংশের নামে গোত্রের নামে তারা যুদ্ধ করে। তা অন্যায়-ন্যায় যাই হোক না কেন। নারী পুরুষ মিলনের ক্ষেত্রে অদ্ভুত সব ব্যবস্থা ও প্রথা প্রচলিত। কা’বা ঘরে, তার আশেপাশে – প্রত্যেক গোত্র ও ঘরে বিভিন্ন নামে, বিভিন্ন মহৎ উদ্দেশ্যে মূর্তি বসানো। ইবরাহিম আলাইহিস সালাম প্রতিষ্টিত দ্বীনে অদ্ভুত সব সংযোজন। সমাজে জুয়া, মদ্যপান, ব্যভিচার, হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, হত্যা, প্রতিহিংসা পরায়নতার ছড়াছড়ি।

এসব ঘৃণা করতেন। ন্যায় ও সত্য সম্পর্কে গভীর

চিন্তা করেন। তার চরিত্র ছিল সর্বোত্তম। তিনি সর্বাধিক শিষ্টাচারী, নম্র ভদ্র, সত্যবাদী। সব চেয়ে নির্ভরযোগ্য আমানতদার। আল-আমিন।

তিনি হাঁটছেন। কাছের মানুষদের সত্যের দাওয়াত দিচ্ছেন। কয়েকদিন আগে তার কাছে এসেছে সত্যের বাণী।

“সেই প্রভুর নামে পড় যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে রক্ত পিণ্ড থেকে। পড় সেই প্রভুর নামে যিনি তোমাদের জন্য অধিকতর দয়ালু।”

হাতে গোণা কিছু মানুষ বিশ্বাস করেছে। তাতে কি! তিনি তার কাজ করে যাচ্ছেন।

রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি হাত তুললেন। দোয়া করলেন তাদের জন্য যারা কিছুক্ষণ আগেও পাথর মেরে শহর থেকে বের করে দিয়েছে।

তিনি ষাট মাইল পথ পায়ে হেঁটে তায়িফে গেছিলেন ইসলামের দাওয়াত দিতে। দশদিন ধরে ঘুরেও কেউ সত্য তো গ্রহণ করলই না, উল্টো শহর থেকে বের করে দিল।

তিনি হেঁটে বেরিয়ে যাচ্ছেন তার প্রিয় শহর থেকে। সেই শহর যেখানে তিনি জন্মেছিলেন। সেই শহর যে শহরের চেনা মানুষগুলো তাকে ও তার সঙ্গীদেরকে অপমান করেছে, অত্যাচার করেছে, সবশেষে হত্যার চেষ্টায় মেতে উঠেছে। তার অপরাধ তিনি সত্যের দিকে ডেকেছেন, ন্যায়ের দিকে ডেকেছেন।

তিনি হেঁটেছেন তার রবের দেখানো পথে।

অশান্তিপূর্ণ মদিনায় গঠন করেছেন ইসলামী সমাজ।

তার সাথে ছিল তিন শতাধিক সাহাবী, দুটি ঘোড়া আর কতিপয় উট! তা নিয়েই তিনি বদরের প্রান্তরে মুখোমুখি হয়েছেন তেরশত সৈন্যের যাদের সাথে ছিল একশ ঘোড়া এবং অসংখ্য উট। আল্লাহ তাকে বিজয় দিয়েছেন।

তার সাহাবীদের নিয়ে উহুদ, খয়বর সহ ছোট – বড় অনেক লড়াই করেছেন। হয়েছেন কঠিন মুহূর্তের মুখোমুখি। কখনও শত্রুপক্ষের সাথে সন্ধি করেছেন, করেছেন কূটনৈতিক চুক্তি। ন্যায়ের প্রয়োজনে কখনও ইসলামের শত্রুদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন, কখনও ক্ষমার স্রোতে ভাসিয়েছেন তাদের।

একইসাথে তার উপর ওহী নাযিল হয়েছে। তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন। রাষ্ট্রের নেতা হিসেবে ন্যায়ের সৈনিক হিসেবে তার সঙ্গীদেরকে প্রস্তত করেছেন।

সমগ্র জাযিরাতুল আরবে গঠিত হয়েছে এক ইসলামী রাষ্ট্র ।

তার সঙ্গীরা তা বিস্তৃত করেছেন, ন্যায়ের সুবাতাস ছড়িয়েছেন দুর থেকে বহুদূরে।

সময়ের স্রোত চলে গেছে অনেক দূর।

তিনি হেঁটেছেন ন্যায় ও সত্যের পথে।

আমরা হাঁটছি সেই মূর্খতার যুগে যেখান থেকে তার হাঁটার শুরু।

পেশায় তড়িৎ প্রকৌশলী। মাঝে মাঝে কিছু লিখতে ইচ্ছা হয়। কিছু লিখি। তারপর আবার মুছে ফেলি। লেখা আর মুছে ফেলার মাঝে কিছু থেকে যায়। সেগুলোর জন্যই এখানে আসা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top