সবেমাত্র পরীক্ষা শেষ করে গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। আর পরিকল্পনা করছি সামনের কটা দিন কিভাবে কাটাব। হঠাত প্রফেসরের ফোন, হাসিহাসি কণ্ঠে বললেন, ‘তোমার জন্য একটা ভালো খবর আছে। ঢাকা থেকে একটা টীম এসেছে, দেশি বিদেশী গবেষক রয়েছে সেখানে। ওরা বাংলাদেশের গ্রাম গুলোর সামাজিক সম্পর্কের সুস্থতা নিয়ে একটা গবেষণা করছে। তুমি ওদের সঙ্গ দাও, এতে তোমার থিসিসের একটা অভিজ্ঞতা হবে।’
আমি ‘ঠিক আছে স্যার’ বলে ফোন রাখলেও মেজাজ বিগড়ে গেল। এতদিনের পরীক্ষার চাপের পর এই অবসরেই থিসিসের কাজ ধরিয়ে দিল। ধুর!
পরদিন সকালে ওরা যে হোটেলে আছে সেখানে চলে গেলাম। হাসিমুখে করমর্দন শেষে পরিচিত হয়ে নিলাম। একজন ব্রিটেনের নাগরিক, বাকিরা দেশেই বিভিন্ন বেসরকারি এনজিওতে কর্মরত। যাই হোক দুপুর নাগাদ আমরা বেরিয়ে পড়লাম। গ্রামের উদ্দেশ্যে।
গ্রাম। নামটা শুনলেই ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামের কথা মনে পড়ে। আমিও গ্রামের ছেলে। সেই দুর্দান্ত শৈশব কৈশোর পার করে আজ শহরের চার দেয়ালের মাঝে বন্দী হয়ে গেছি। মানুষের সেই সরলতা, সেই আন্তরিকতা এখনও আমাকে মুগ্ধ করে।
যাই হোক, আমরা প্রথমেই হাইস্কুলের হেডমাস্টার সাহেবের সাথে দেখা করলাম। আমাদের দেখে বেশ খুশি হলেন। সাথে একজন সহকারী শিক্ষককে দিলেন।
আমরা কাজ শুরু করলাম। তেমন কঠিন কিছু না। ওরা একটা ফরমে কিছু প্রশ্ন তৈরি করে নিয়ে এসেছে। প্রথমদিকের প্রশ্নগুলো স্বাভাবিক সম্পর্ক নিয়ে হলেও শেষের দিকের গুলো যৌন জীবন ও যৌন সম্পর্ক নিয়ে। জরিপ জাতীয় কিছু। প্রথমে এরা জরিপ চালাবে, এরপর সামাজিক অভ্যন্তরীন ব্যাপারগুলো নিয়ে কাজ করেন বা জানেন এমন কিছু মানুষের সাক্ষাৎকার নিবেন।
জরিপে নারী পুরুষদের অপশন যেমন রাখা হয়েছে, তেমনি অবিবাহিত বালক, যুবক, যুবতীদেরও অপশন আছে। গবেষণায় ব্যাপকতা আছে বলা যায়।
মানুষ প্রথম দিকের প্রশ্নগুলোর উত্তর স্বাভাবিকভাবে দিলেও পরের দিকের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে একটু বিব্রত হতে লাগল। যেমন – আপনি স্বামী বাদে অন্য কারও সাথে যৌন সম্পর্ক করেন কি না – এ ধরণের প্রশ্নে কেই বা নেগেটিভ উত্তর দিতে চায়। ফলাফল যা হবার তাই হল, একটি সুস্থ সমাজের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠল আমাদের জরিপে।
কিন্তু সমস্যা হল পত্রিকা পড়ার কারণে এবং এসব নিয়ে আগেও কাজ করার কারণে আমরা বুঝতে পারলাম সঠিক তথ্যের ঘাটতি রয়েছে আমাদের জরিপে। আপাতত জরিপ কাজ স্থগিত করে মতামত নেয়ার কাজে নেমে পড়লাম আমরা।
স্থানীয় মেম্বার সাহেবের কাছে যাওয়া হল। এই গবেষণার প্রয়োজনীয়তা এবং এর গোপনীয়তা নিয়ে আশ্বস্ত হবার পর তিনি ভদ্র সভ্য সমাজের কিছু দিক আমাদের কাছে উন্মোচিত করলেন।
মেম্বার সাহেব বললেন, আগের থেকে এসব জিনা – ব্যাভিচার অনেক বেড়ে গেছে। এলাকার মেম্বার হিসেবে অনেক কিছু জানতে হয়, জেনেও চুপ মেরে থাকি। আগে তাও কিছুটা রাখ ঢাক ছিল, এখন অনেকটা খোলামেলা হয়ে গেছে ব্যাপারগুলো। দাম্পত্য কলহ নাই এমন বাড়ি খুব কম পাবেন। মাঝে মাঝেই ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার অবস্থা, তখন আমাদের ডাক পড়ে। দুই জনকেই বুঝাই, গার্জিয়ান ডাকি। অনেক ক্ষেত্রেই আবার এসব পরকীয়া ধরা পড়ে যায়। তখন উপায় থাকে না। আগের স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি করে দেয়া হয়। এগুলো নিত্যকার ঘটনা। এখন আমাদের সমাজের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একটু দম নিয়ে মেম্বার সাহেব বলেন, আগে তাও ছেলে মেয়েগুলো কিছু কন্ট্রোলে ছিল। মোবাইল আসায় সেগুলোও গেছে। হাইস্কুলে উঠার কয় দিন পরেই দুম করে আরেকজনের হাত ধরে পালায়ে যাচ্ছে। সেগুলারে ধরে এনে ছাড়াছাড়ি করায়ে আবার গার্জিয়ানের হাতে বুঝায়ে দিই। বুঝলেন ভাই সাহেব, ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
আমরা শেষে মেম্বার সাহেবকে এর প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায় জিজ্ঞেস করলাম। উনি আশানুরূপ উত্তর দিতে পারলেন না।
এবার আমরা স্থানীয় এক মুফতি সাহেবের কাছে গেলাম। মুফতিরা সমাজের অনেক ভিতরের অবস্থা জানেন। তাদের কাছে মানুষ অনেক গোপন বিষয় জানতে আসে, সমাধান নিতে আসে। যাই হোক, মুফতি সাহেব বিখ্যাত লোক। মফস্বল এলাকায় তাঁর মাদ্রাসা আছে।
আমরা সামাজিক সম্পর্কের সুস্থতা নিয়ে গবেষণা করতে এসেছি শুনে উনি পালটা জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিসের ভিত্তিতে সুস্থতা? পশ্চিমা মানদণ্ডে, বাঙ্গালি মানদণ্ডে নাকি ইসলামী জীবনব্যবস্থার আলোকে?”
আমি এই মফস্বলের একজন আলেমের মুখে এরকম শক্ত প্রশ্ন করতে শুনে কিছুটা বিস্মিত হলাম। আমাদের গবেষকদল কিছুটা থতমত খেয়ে বললেন, আপনি আপনার মত করে বলুন, সমস্যা নাই।
মুফতি সাহেব বলেন, আপনাদের প্রতি আমাদের ব্যক্তিগতভাবে কোন আক্রোশ নাই। কিন্তু দেখুন এনজিওরা যেভাবে সামাজিক উন্নতির নামে, ক্ষুদ্র ঋণের নামে, স্বাস্থ্যরক্ষার নামে কাজ করছে, তাতে তাদের অনেক কর্মকাণ্ড ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী। আস্তে আস্তে মহিলাদের পর্দার বাইরে আনা হচ্ছে, পরিবার ব্যবস্থাকে দুর্বল ও ভঙ্গুর করে দেয়া হচ্ছে। আজ বেশীরভাগ মহিলারাই ঘরের কাজ করতে আগ্রহী নয়। টেলিভিশন, সিনেমা, ইত্যাদির ব্যাপক প্রভাবে তারা অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। মোবাইল ফোন আসায় ছেলে মেয়েগুলো আজ অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছে, মোবাইলে অশ্লীল ভিডিও দেখে নিজেরাও সেগুলোতে জড়িয়ে যাচ্ছে। ব্যাভিচারে সয়লাব এ সমাজ।
একটু থেমে মুফতি সাহেব আবার বললেন, দেখুন, আজ আপনাদের বাঙ্গালী মূল্যবোধে আঘাত লাগছে বলে আপনারা এ বিষয়টাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। বাঙ্গালী মূল্যবোধের ভিত্তি কি? যতক্ষণ পর্যন্ত এসব ব্যাভিচার গোপন থাকে, সমাজকে আঘাত করে না ততক্ষণ পর্যন্ত কোন মাথাব্যাথা নাই। ইসলাম পরিপূর্ণ ধর্ম। সমাজ, ব্যক্তি ও রাস্ট্রজীবনের সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর ক্ষতির কারণকেও আল্লাহ তাআলা দূর করে দিয়েছেন। এর অনেক কিছুই আমাদের বুঝে আসে, অনেক গুলো আমরা বুঝতে পারি না। দেখুন, পর্দা করা ফরজ। মাহরাম ও গায়রে মাহরাম এই দুই শ্রেণীতে মানুষকে ভাগ করে দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা। গায়রে মাহরামের মধ্যে নারীদের জন্য রয়েছে দেবর, কাজিন থেকে শুরু করে অপরিচিত পুরুষরা । এদের সাথে পরিপূর্ণ পর্দা আবশ্যক। একই কথা পুরুষদের জন্যও প্রযোজ্য। এগুলো হল বাহ্যিক নিরাপত্তা। এর থেকে বড় হল অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বারবার তাকওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। নারী ও পুরুষদের দৃষ্টি অবনত করে রাখতে বলেছেন। জিনা ব্যাভিচারের জন্য হুদুদ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আখিরাতে শাস্তির কথা স্মরণ করে দিয়েছেন। এছাড়া কুরআন হাদিসে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দুই জনের মধ্যে সদ্ভাব বজায় রাখার পুরস্কার রাখা হয়েছে। আরও কত কি! যার মধ্যে তাকওয়া থাকবে সে কি কখনও এসবে জড়াবে?
আমি মন্ত্রমুগ্ধের মধ্যে হুজুরের কথা শুনছিলাম। উনি এবার আমাদের সবাইকে চা দিতে বললেন। চায়ে চুমুক দিয়ে বলা শুরু করলেন, দেখুন, আপনাদের এতক্ষণ ইসলামী ব্যবস্থার কথা বললাম। এগুলো অনেক সময়ের ব্যাপার। ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতে হবে, তারপর বুঝে আসবে। এবার আপনাদের আমাদের সমাজের অবস্থার কথা শুনাই। আমাদের বাঙ্গালি সমাজ এর উপরে উপরে সৌন্দর্য দেখেন আপনারা। ভিতরটা কবেই নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু উপরে একটা আস্তরণ রয়েছে। মাঝে মাঝে ফুটো হয়ে একটু আধটু গন্ধ বেরোচ্ছে এই যা।
সেদিন এক মহিলা আসলেন, গর্ভবতী হয়েছেন। স্বামী এখনো জানেন না। বাচ্চার বাবা তার দেবর। জানতে এসেছেন, এই বাচ্চা গর্ভপাত করানো যাবে কি না। ঘটনা এরকম অনেক আছে। পাশের গ্রামে যান, এক পরিবার আছে, তিন ভাই এর মধ্যে দুই ভাই বিদেশ থাকেন। বউ বাড়িতে থাকেন। যা হবার তাই, দুই ভাবীর সাথে দেবর পরকীয়ায় জড়িত। এগুলো পরিবারের অভ্যন্তরের ঘটনা, বাহিরে আসে খুব কম।
মাঝে মাঝে আমি বাজারের ওদিকে যাই, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে দেখা হয়। বেশীরভাগেরই অনেক টাকা পয়সা। আমাকে জিজ্ঞেস করে, মুফতি সাহেব, এই এই অপরাধ করি, তওবা কি কবুল হবে? আমি বলি, বাড়িতে বউ অসুস্থ, আরেকটা বিয়ে কেন করেন না?
উনি দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলেন, দেখেন মুফতি সাহেব, এখন এসব করি ছেলেরাও জানে, বউও জানে। কিছু বলে না। এখনই বিয়ে করি, জুতাপেটা করে ঘর থেকে বের করে দিবে। তাদের মুখে চুনকালি পড়বে না? এছাড়া জমিজমাতেও তো ভাগ বেড়ে যাবে।
মুফতি সাহেব এবার হতাশ গলায় বললেন, বহুবিবাহকে যে কি খারাপ চোখে দেখে মানুষ তা আপনাদের বলে বোঝানো যাবে না। ইসলামে একসাথে চারজন পর্যন্ত স্ত্রী রাখা যায় যদি তাদের মাঝে ইনসাফ করতে পারা যায়। এটা আল্লাহ তাআলার একটা বিধান। এই অপশন আল্লাহ তাআলা রেখেছেন মানে এর হাকিকত আছে। কেউ যদি আমল করতে পারে করবে, কেউ না পারলে করবে না। কিন্তু এখন কি হয়েছে দেখেন, বহুবিবাহকে ঘৃণা করে না এমন মানুষ খুব কম। কোন পরিবারে কেউ দ্বিতীয় বিয়ে করছে মানে, সে সবার মুখে চুনকালি দিয়েছে। আল্লাহ তাআলার একটা বিধান, রাসুল্লুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটা সুন্নতকে ঘৃণা করা হচ্ছে। কি ভয়ংকর! আল্লাহ তাআলার কোন বিধান নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করলে ইমান চলে যায়, সেখানে এই বিধানকে ঘৃণা করা হচ্ছে। এই হচ্ছে সমাজের অবস্থা।
আমাদের চা খাওয়া শেষ। কিন্তু কেউ নড়ছে না। হুজুর বলে চলেছেন, সাধারণ মানুষের কথা বাদ দিলাম, আলেমরা পর্যন্ত এই বিধান ঘৃণা করতেছে। এবার আপনাদের এর কিছু হাকিকত বুঝাই। দেখুন, আমাদের দেশে বিয়ে কত কঠিন হয়ে গেছে। বালেগ হবার পর বিয়ে দেয়ার কথা সেখানে আটাশ ত্রিশ বছরের আগে শিক্ষিতরা বিশেষ করে বিয়ে করতে পারছে না। ফলশ্রুতিতে কি করছে? অশ্লীল ছবি দেখে হস্তমৈথুন করছে, জিনা করছে, অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। প্রেম ভালোবাসা তো এখন সমাজের মূলধারার অংশ হয়ে যাচ্ছে। ছেলে মেয়ে প্রেম করলে সমস্যা নাই, কিন্তু বিয়ে করে নিয়ে আসলে বাবা মায়ের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ছে।
আরেকটা ক্ষেত্র হচ্ছে, আমাদের বিধবা, প্রতিবন্ধী এসব বোনদের কি অবস্থা আজ সমাজে? একবার কোনভাবে ডিভোর্স হয়ে গেলে, স্বামী মারা গেলে তাকে বিয়ে দেয়া পাহাড়সম কঠিন হয়ে গেছে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে উপযুক্ত পাত্র ছাড়া পরিবার বিয়ে দিতে নারাজ। উপযুক্ত পাত্ররা কুমারী পাত্রী চায়। আবার দ্বিতীয় বিয়ে ঘৃণিত হওয়ায় দ্বিতীয় বউ হিসেবে গ্রহণ করবে সেই অবস্থাও নাই। এই মহিলাদের যৌন চাহিদা কিভাবে পূরণ হবে? সেদিন এক বোন আমাকে এসএমএস পাঠিয়েছে। উনি আলেম পরিবারের সন্তান। ওই বোন নিজেও আলেমা, আবার দুই ভাইও আলেম। দুই বছর আগে তার স্বামী মারা গেছে। এই দুই বছর ধরে তিনি ভাইদের পরিবারে আছেন। উনি আমাকে অনুরোধ করেছেন, আমি যেন তার ভাইদের বুঝাই। তিনি এভাবে থাকতে পারছেন না। আমি ওদের একভাইকে ডেকে বললাম, বোনকে বিয়ে দিয়ে দিন। উনি উত্তর দিলেন, উপযুক্ত পাত্র পাচ্ছেন না। বললাম উপযুক্ত হওয়ার মানদণ্ড রিভাইজ করেন, এটা আপনার বোনের জীবনকে বিভীষিকাময় করে তুলছে। দরকার হলে আরেক্টু কম অবস্থাসম্পন্ন পাত্রের কাছে বিয়ে দেন। অথবা আপনার বোন যদি রাজি হয় এমন কারও আছে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে দেন। উনি বললেন, দরকার হলে বোন সারাজীবন বাড়িতে পড়ে থাকবে, তাও এমনে বিয়ে দিবে না।
হুজুর বললেন, দেখুন সমাজের এই সমস্যাগুলো উপেক্ষা করে গেলে হবে না। প্রত্যেকটা সমস্যাকে স্বীকার করে নিয়ে আল্লাহ তাআলার নির্দেশিত পথে সমাধান করতে হবে। তবেই আপনারা একটা সুস্থ সমাজ ব্যাবস্থা পাবেন।
‘আপনারা যান, ঘুরে দেখুন, সমস্যাগুলো এমনিতেই চোখে পড়বে।’ – এই বলে হুজুর আমাদের বিদায় দিলেন। আমরা আবার বেরিয়ে পড়লাম। এবার কিছুটা ভিন্ন ভাবে জরিপ শুরু করলাম। অংশগ্রহণকারীদের আশ্বস্ত করা হল, তাদের সাথে আন্তরিকভাবে মিশে যতখানি পারা যায় আমরা তথ্য নেয়া শুরু করলাম। আগের গুলোর সাথে নতুন কিছু প্রশ্ন যুক্ত করলাম।
পর পর কয়েকদিন ঘুরে ফিরে তথ্য সংগ্রহ হল। গ্রামের সাথে শহরকেও যুক্ত করা হল। এরপর ফলাফল বিশ্লেষণের কাজ। ফল কি পেলাম তা আর বলতে চাই না। শুধু এটুকুই বুঝতে পারলাম সামাজিক মুখোশের আড়ালে অনেক আগে থেকেই এই সমাজে অসামাজিকতার বিষবাস্প ছড়িয়ে আছে। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় যা বিস্ফোরণের রূপ নিয়েছে। সাথে যুক্ত হয়েছে কিশোর যুবারা।
ওদেরকে বিদায় দিয়ে আমি হলে ফিরে আসলাম। পরের কয়েকটা দিন কেমন জানি একটা ঘোরের মধ্যে কাটালাম। মুফতি সাহেবের কথাগুলো বারবার মনে হল। আসলেই সমস্যার স্বরূপ বোঝা দরকার। ইসলাম নিয়ে আমার কৌতূহল তৈরি হল। সেক্যুলার শিক্ষার কারণে অনেক কিছুই সমস্যা মনে হত না। অথচ এই জিনিসগুলোই আস্তে আস্তে সমাজ জীবনকে বিষবত করে তুলছে।
আমি আবার বেরিয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য মুফতি সাহেবের কাছে যাওয়া। জানালার পাশে বসেছি বাসে। রাস্তায় গাছ গুলো সাই করে পিছে চলে যাচ্ছে। সূর্য তার মধ্যগগণের তেজ ছাড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে লম্বা গ্রামটার উপরে যেন আলো দিচ্ছে। ছায়া সুনিবিড়, শান্তির নীড়। কিসের শান্তি? দুনিয়ার? নাকি আখিরাতের? এই সুনিবিড় ছায়ার উপরেও অপরাহ্নের ছাপ পড়েছে। সময় এসেছে জানার, শোনার, বলার। এখান থেকে উত্তরণের। তথাকথিত সেক্যুলার ওষুধে কাজ হবে না। এর দরকার কোরামিন ইনজেকশনের। দরকার একটা ইসলামী সমাজব্যবস্থা।