এলোমেলো কথামালা

এলোমেলো কথামালা

আমাদের সকলের জন্যই চব্বিশ ঘণ্টায় এক দিন। এমন নয় যে কারো জন্য সময় বেশী কারো জন্য কম। আল্লাহ আমাদের সবার জন্যই দিন রাতের আবর্তন ঘটান। আমরা দিনে কাজ করি, গল্প করি, ঘুরি ফিরি, পড়াশোনা করি, রাতে ঘুমাই। অনেকের জন্যই এটার একটা কাস্টমাইজড ভার্সন আছে। সেটা হল দুপুরের পর বা বিকালে ঘুম থেকে উঠে কাজ করা, রাতে রিল্যাক্স করে ফজরের কাছাকাছি সময়ে ঘুমানো। অনেকদিন আমি এই কাস্টমাইজড ভার্সনের লোক ছিলাম।

বারাকাহ বলে একটা শব্দ আছে যেটাকে আমরা বরকত নামে চিনি। মাঝে মাঝে আরেকজনের জন্য বরকতের দোয়া করি। এই বারাকাহ জিনিসটা অদ্ভুত। এটি এমন একটা জিনিস যা শুধু অনুভব করা যায়, দূর থেকে বোঝা যায় না।

বারাকাহ হতে পারে খাবারের মধ্যে। দেখা গেল অল্প একটু খাবার দিয়ে অনেক মানুষ তৃপ্তি সহকারে খেল। তা হতে পারে কাজের মধ্যে। কোন কাজে বরকত থাকলে কাজ সুন্দরভাবে আনন্দসহকারে করা যায়। এমনি যেকোন জিনিসেই আল্লাহ বারাকাহ দান করতে পারেন। এমনকি স্ত্রী-সন্তানেও বারাকাহ দিয়ে দিতে পারেন।

এগুলোর পাশাপাশি সময়ের মধ্যেও বারাকাহ থাকতে পারে। একই চব্বিশ ঘণ্টা কারো কাছে অনেক বড় মনে হতে পারে, আবার কারো কাছে ‘আসল আর চলে গেল’ মনে হতে পারে। আপনি যখন দিনের পর দিন দেখবেন যে আপনার সময়গুলো অপচয় হচ্ছে কম, অনেক কাজ করার পরও দেখবেন আপনার পছন্দের কাজে ব্যয় করার মত সময় আছে, তখন বারাকাহ কিছুটা অনুভব করতে পারবেন।

আমি এখন মাঝে মাঝে অনুভব করি যে আমার জীবনের একটা দীর্ঘ সময় প্রায় বারাকাহ শুন্যভাবে কাটিয়েছি। তার মানে এই না আমি এখন প্রতি মুহূর্তে আল্লাহর বারাকাহ অনুভব করি। বলতে গেলে একেবারে শুরুর দিকের মুহূর্তে দাড়িয়ে আছি। বারাকাহ দানের মালিক তো আল্লাহ! রাত পোহাবার কত দেরী তা ভাবলে মনে চলে আসে ‘হায় আফসোস!’

আমাদের সময়গুলো চলে যায়। প্রবাদের আছে, সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে স্রোতের যাওয়া আসা প্রত্যক্ষ করা যায়। মাঝে মাঝে তা পায়ে এসে লাগে। কিন্তু সময়ের চলে যাওয়া সহজে অনুভব করা যায় না।

প্রকাণ্ড সমুদ্রের মাঝে একখানি দ্বীপের পুকুরে এক লোককে কল্পনা করা যাক যার চোখ বন্ধ বহুদিন। সেখানে এক ডিঙি নৌকা নিয়ে সে পুকুরে ঘুরে। হঠাত যদি তাকে সমুদ্রের তীরে নিয়ে গিয়ে চোখ খুলে দেয়া হয় তবে কিছু সময় লাগবে আলোর ঝলকানি সইতে। এরপরে সে দেখবে সমুদ্রের বিশালতা। যাকে বলে চোখ ধাধিয়ে যাওয়া।

আমার চোখ ধাধিয়ে গেছে। হে আল্লাহ! তোমার কাছে শুকরিয়া প্রকাশের ভাষা নাই। যে সমুদ্রের সামনে এনে তুমি আমার চক্ষু উন্মুক্ত করেছ তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা আমার জানা নাই। যে স্থিরতার, যে প্রশান্তির, যে জ্ঞানের সমুদ্রের নমুনা তুমি দেখিয়েছ তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আলহামদুলিল্লাহ!

আমার ছোট ডিঙি নিয়ে এই সমুদ্রে ভাসলাম। জানি না আমার আমিত্বকে ছাপিয়ে কতদূর যেতে পারব। জানি না আর কতটুকু সময় আল্লাহ আমার জন্য রেখেছেন। আমার লক্ষ্যের দিক স্থির, কিন্তু এই প্রকাণ্ড জলরাশিতে সেই লক্ষ্যটাকে দেখতে পারছি না। দেখতে পারছি না যাওয়ার পথটাও।

হে আল্লাহ! তুমি আমাদের সময়ে বারাকাহ দিয়ে দাও। আমাদেরকে পিছনের দিকে ফিরিয়ে নিও না। হে আমাদের রব! তুমি আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করিও না। আমাদেরকে সলেহিন দের অন্তর্ভুক্ত করে নাও। আমাদের মনকে করে দাও স্থির, প্রশান্ত।

আমাদের লক্ষ্য হোক –

“হে প্রশান্ত আত্মা, সন্তুষ্ট চিত্তে তোমার রবের কাছে আসো এবং আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে আমার জান্নাতে প্রবেশ করো ।”

পেশায় তড়িৎ প্রকৌশলী। মাঝে মাঝে কিছু লিখতে ইচ্ছা হয়। কিছু লিখি। তারপর আবার মুছে ফেলি। লেখা আর মুছে ফেলার মাঝে কিছু থেকে যায়। সেগুলোর জন্যই এখানে আসা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top